বুধবার, মার্চ ২৯, ২০২৩
- বিজ্ঞাপন -

সেভিংস একাউন্ট (সঞ্চয়ী হিসাব)

আসসালামু আলাইকুম, উড্ডয়নে আপনাকে স্বাগতম!
কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন।

চলে এলাম আজ এক নতুন বিষয়ে আলোচনা করার জন্য। আজ আমরা জানব সেভিংস একাউন্ট বা সঞ্চয়ী হিসাব সম্পর্কে। সেভিংস একাউন্ট কি, কিভাবে ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট ওপেন করতে হয়, কারা সেভিংস একাউন্ট এর ওপেন করতে পারবেন, সেভিংস একাউন্ট এর সুবিধা ইত্যাদি সম্পর্কে।

সঞ্চয় হচ্ছে আয় এবং ব্যয়ের পার্থক্য। যা কিনা সবার কম বেশি থাকে। আর এই সঞ্চয় যদি সামান্য ও হয় তারপরও আমরা চাই এটা একটা নিরাপদ স্থানে রাখতে যেন দরকার এর সময় এটিকে আমরা সময়মত ব্যবহার করতে পারি। তাই আপনার যদি অতি অল্প সঞ্চয়ও থাকে তা জমানোর জন্য বা নিরাপদে রাখার জন্য দরকার একটি উত্তম স্থান যা হতে পারে একটি ব্যাংক আর ব্যাংকে টাকা জমানোর জন্য দরকার একটি ব্যাংক একাউন্ট। লেনদেনের জন্যও ব্যাংক একাউন্ট একটি দরকারি বিষয়। ব্যাংকে কয়েক ধরনের একাউন্ট রয়েছে তার মধ্যে সেভিংস একাউন্ট সবার জন্য অন্যতম একটি একাউন্ট।
আসুন এখন আমরা সেভিংস একাউন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

সেভিংস একাউন্ট বা সঞ্চয়ী হিসাবঃ
সেভিংস একাউন্ট (সঞ্চয়ী হিসাব) নামটি শুনামাত্রই আমরা বুঝতেই পারি এই একাউন্টের কার্যকলাপ সম্পর্কে। এই একাউন্ট মূলত টাকা জমা রাখতে ব্যবহার হয়। সঞ্চয়ী একাউন্ট হলেও এই একাউন্ট থেকে প্রয়োজনে টাকা তোলা ও জমা দেয়া যায়। তবে এ ধরনের একাউন্টের টিপি বা ট্রানজেকশন প্রোফাইল (লেনদেন লিমিট) কম থাকে। সেভিংস একাউন্টের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এই একাউন্টে নির্দিষ্ট সময় টাকা জমা রাখলে ব্যাংক থেকে একটি নির্দিষ্ট অংকের মুনাফা প্রদান করা হয়। ব্যাংক ভেদে সঞ্চয়ী একাউন্টে সুদের হার বিভিন্ন হয়ে থাকে।

কারা সেভিংস একাউন্ট এর ওপেন করতে পারবেন?
যে কেউ এ ধরনের একাউন্ট খুলতে পারে। সেভিংস একাউন্ট এর অন্যতম ব্যবহারকারী হচ্ছেন কর্মজীবী মানুষ, পেনশন পাওনাকারী, গৃহিণী এবং শিক্ষার্থীরা। যাদের লেনদেনের তেমন প্রয়োজন হয় না, তাদের জন্য এই একাউন্ট উপযোগী। এই একাউন্ট এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে খোলা যায়। এখানে একটা বিষয় জেনে রাখা ভালো, লাভজনক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হলে অবশ্যই লেনদেনের সুবিধার্থে কারেন্ট একাউন্ট খোলা উচিত আর অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হলে যেমন স্কুল-কলেজ টাইপের প্রতিষ্ঠান কারেন্ট বা সেভিংস একাউন্ট ও খুলতে পারে।

কিভাবে ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট ওপেন করতে হয়?
সেভিংস একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে, সেই বিষয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

ব্যক্তির পরিচয় প্রমাণ পত্রঃ
আপনি যদি সেভিংস একাউন্ট খুলতে চান তাহলে আপনার ব্যক্তিগত, মানে ব্যক্তির পরিচয় এর প্রমাণপত্র লাগবে। আর সেভিংস একাউন্ট খুলতে যেসব ডকুমেন্টস ব্যক্তিগত পরিচয় প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় তা হলো:
* জাতীয় পরিচয় পত্র/ ভোটার আইডি কার্ড।
* পাসপোর্ট।
* ড্রাইভিং লাইসেন্স।
* এমপ্লয়ি আইডি ইত্যাদি।

ব্যক্তির ঠিকানার প্রমাণ পত্রঃ
সেভিংস একাউন্ট খুলতে চাইলে অবশ্যই ব্যক্তির ঠিকানা প্রমাণ পত্র লাগবে। আর ব্যক্তির ঠিকানা প্রমাণপত্রগুলো হচ্ছে-
* জাতীয় পরিচয় পত্র / এনআইডি কার্ড
* বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল, গ্যাস বিল এর কপি।

ছবি বা ফটোঃ
একাউন্ট পরিচালনাকারী প্রত্যেক ব্যক্তির ২-৪ কপি পাসপোর্ট সাইজ ফটো লাগবে। ফটোগুলো সত্যায়িত হতে হবে। নমিনীর ১ কপি ছবি লাগবে যা হিসাব পরিচালনাকারী কর্তৃক সত্যায়িত হবে।

নমিনীঃ
ব্যক্তিগত একাউন্টে সর্বনিম্ন একজন নমিনীর পরিচয় প্রদান করতেই হবে। অধিকাংশ ব্যাংক এ নমিনীর স্বাক্ষর প্রয়োজন হয় না। তবে নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে হবে এবং নমিনীর যেকোন একটি পরিচয়পত্র এনআইডি / পাসপোর্ট দিতে হয়।

পরিচয়দানকারীঃ
সাধারণত যে ব্যাংকে একাউন্ট ওপেন করবেন ওই ব্যাংকে একাউন্ট আছে এমন একজন গ্রাহক পরিচয়দানকারী হবেন। পরিচয়দানকারী একাউন্ট ফর্মের নির্ধরিত স্থানে নমুনা স্বাক্ষর, নাম, ঠিকানা, অ্যাকাউন্ট নম্বর ইত্যাদি লিখবেন। তিনি একাউন্ট খোলার দিন উপস্থিত না হলেও চলবে। বেশিরভাগ ব্যাংকেই এখন আর একাউন্ট খুলতে পরিচয়দানকারীর প্রয়োজন হয় না।

টাকাঃ
নির্ধরিত জমা স্লিপ পূরণ করে টাকা জমা দিতে হবে। সঞ্চয়ী হিসাবের জন্য ব্যাংক ভেদে ৫০০ থেকে আরও বেশি টাকা জমা দিতে হতে পারে।

এখন উপরোক্ত সকল ডকুমেন্ট যদি আপনার কাছে থাকে। তাহলে আপনারা নির্দিষ্ট কোন ব্যাংক এর যে কোনো শাখায় আপনার নামে সেভিংস একাউন্ট খুলতে পারবেন। এই নথিগুলো জমা দেওয়ার পর ব্যাংক সেগুলোকে যাচাই করবে তারপর তারা নির্ধারণ করবে। গ্রাহক তাদের প্রতিষ্ঠানে সেভিংস ব্যাঙ্ক একাউন্ট খোলার উপযোগী কিনা।

বর্তমানে আপনি বিভিন্ন ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট ঘরে বসে অনলাইন-এ ও খুলতে পারবেন। আপনি আপনার স্মার্ট ফোন দিয়ে খুব সহজেই একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে যেকোনো জায়গা থেকেই আপনার অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারেন। এখন অনেক ব্যাংক এই সুবিধা দিচ্ছে। যেমন সিটি ব্যাংকের সিটি টাচ, সোনালি ব্যাংকের ই-অয়ালেট এপস, IBBL এর সেলফিন এপস ইত্যাদি। সাধারণত, এই অনলাইন অ্যাকাউন্টগুলোতে উচ্চ সুদের হার দেওয়া হয়ে থাকে।

সেভিংস একাউন্ট এর সুবিধাঃ
০১. চেকবই ও ডেবিট কার্ডের সুবিধা পাওয়া যাবে।
০২. সহজ লোনের ব্যবস্থা হবে এই একাউন্ট এর জন্য।
০৩. নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ধারাবাহিকভাবে সুদের হার পাওয়া যাবে।
০৪. এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে তহবিল স্থানান্তরও করতে পারেন।
০৫. আপনি ডেবিট কার্ডের এটিএম পরিষেবার মাধ্যমে আপনার অর্থ সহজেই পেয়ে যেতে পারেন।
০৬. ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে আপনি যেকোনো ধরনের কেনাকাটা করে বিল পরিশোধ করতে পারবেন।
০৭. অনলাইনে টাকার লেনদেন ট্র্যাক করা যায়।
০৮. BEFTN, RTGS ও BEFTN এর সুবিধা পাওয়া যায়।
০৯. যেকোনো ধরনের বিল পরিশোধ করা যায় অনলাইন ব্যাংকি এর মাধ্যমে।
১০. ইইন্টারনেট ও এসএমএস ব্যাংকি এর সুবিধা পাওয়া যায়।

সুতরাং, বলা যেতেই পারে সেভিংস একাউন্ট হল একটি কম ঝুঁকিপূর্ণ ও আপনার ভবিষ্যতের জন্য অর্থ সঞ্চয়ের সোজা ও সেরা উপায়গুলোর মধ্যে একটি৷

আজ এই পর্যন্তই, ইনশা আল্লাহ অন্য কোনো টপিক নিয়ে কথা হবে। ভুল হলে অথবা আপনার কোনো মতামত থাকলে আমাদের পেইজে ইনবক্স এর মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন।

লেখক পরিচিতিঃ

- বিজ্ঞাপন -
সম্পর্কিত পোস্টগুলো
- বিজ্ঞাপন -

জনপ্রিয় পোস্টগুলো

- বিজ্ঞাপন -